আজ আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে দাওয়াতে তাবলিগের ৫৫তম এ আয়োজন। বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে এ মোনাজাত হতে পারে। মোনাজাত পরিচালনা করতে পারেন ভারতের মাওলানা জামশেদ। ইজতেমা ময়দানে শনিবার ১০ জোড়া যৌতুকবিহীন বিয়ে পড়ানো হয়েছে। বিয়ে পড়ান ভারতের মাওলানা শামীম আজমী। তবে এবার বয়ানের মঞ্চের পরিবর্তে বিদেশি মুসল্লিদের তাঁবুতে এসব বিয়ে পড়ানো হয়। পরে মুসল্লিদের মধ্যে খোরমা-খেজুর ছিটিয়ে দেয়া হয়। প্রথম পর্বে ৯৬ জোড়া যৌতুকবিহীন বিয়ে হয়েছিল।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্য মুশফিকুর রহিমের নেতৃত্বে একদল খেলোয়াড় শনিবার দুপুরে ইজতেমা ময়দানে আসে। দলে আরও রয়েছেন- শাহরিয়ার নাফিস, জুনায়েদ সিদ্দিকী, রাকিবুল হাসান ও নুরুল হাসান সোহান। তারা ভিআইপি কামরায় অবস্থান নেন। তাবলিগের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম তাদের সময় নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়ার জন্য তাশকিল করেন। মুরব্বিরা জানিয়েছেন, আজ আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত তারা ময়দানে থাকবেন।
অন্যতম মুরব্বি প্রকৌশলী শাহ মো. মুহিবুল্লাহ জানান, বাদ ফজর ভারতের মাওলানা মুরসালিনের বয়ানের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। এ বয়ান বাংলায় অনুবাদ করেন মাওলানা মুফতি আজিম উদ্দিন। বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা মুফতি রিয়াসত, তা বঙ্গানুবাদ করেন মাওলানা আবদুল্লাহ মনসুর। বাদ আসর বয়ান করেন বাংলাদেশের মাওলানা মোশাররফ হোসেন। বাদ মাগরিব বয়ান করেন মাওলানা জামশেদ, তা বাংলায় ভাষান্তর করেন বাংলাদেশের মাওলানা মুনির বিন ইউসুফ।
মাওলানা মুরসালিন ইমান-আমল, তাবলিগের ৬ উসুল ও দাওয়াতের মেহনতের ওপর বয়ান করেন। তিনি বলেন, বর্তমান সমাজে অনেক কিতাব আছে, বড় বড় লাইব্রেরি আছে। তবে আমাদের মধ্যে দ্বীনের মেহনত নেই। সাহাবায়ে কেরাম আজমাইনদের সময় কিতাব ছিল না, তারা লেখাপড়া জানতেন না, কিন্তু তাদের মধ্যে দ্বীনের মেহনত ছিল। তারা দাওয়াতের মেহনতের মাধ্যমে দ্বীন জিন্দা করেছেন। দাওয়াতের মাধ্যমেই সারা দুনিয়ায় দ্বীন বাস্তবায়ন হয়েছে।
মাওলানা মুরসালিন বলেন, নবী করিম (সা.)-এর দেখানো পথে আমল করতে পারলে তবেই কামিয়াবি পাওয়া যাবে। যে ব্যক্তি বিসমিল্লাহ বলে খানা খান, বিছানায় ঘুমাতে যান, ঘর থেকে বের হন- যে কাজই করুন শয়তান তার সঙ্গে শরিক হতে পারে না। নবীর তরিকার ওপর শয়তান কোনো দখল নিতে পারে না। এজন্য নবীর তরিকা ছাড়া রক্ষার কোনো রাস্তা নেই, নাজাতের কোনো পথ নেই। এর বিপরীতে যে চলবে তার জন্য ধ্বংস, তার জন্য বরবাদি।
যান চলাচল : আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে টঙ্গী ও আশপাশের এলাকায় যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশ। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, শনিবার মধ্যরাত থেকে রোববার বিকাল পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের মিরেরবাজার থেকে স্টেশন রোড, কামারপাড়া থেকে আশুলিয়া এবং ঢাকা ময়মনসিংহ সড়কে বিমানবন্দর থেকে টঙ্গী ব্রিজ পর্যন্ত যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, ভোর রাত ৪টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর চৌরাস্তায় এবং ঢাকার মহাখালী থেকে গাড়ি বন্ধ করে দেয়া হবে। উত্তরবঙ্গ থেকে আসা গাড়ি কোনাবাড়ি থেকে বন্ধ করে দেয়া হবে। এছাড়া টঙ্গীমুখী সব শাখা সড়কগুলো বন্ধ থাকবে। তিনি বলেন, ইজতেমায় যোগ দেয়া বৃদ্ধ মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য শাটল বাসের ব্যবস্থা থাকবে। ইজতেমাস্থল থেকে চৌরাস্তা ও মহাখালীমুখী ৩০টি বাস চলাচল করবে।
বিশেষ ট্রেন : টঙ্গী রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার মো. হালিমুজ্জামান জানান, আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে ঢাকা, আখাউড়া ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুট থেকে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। মোনাজাতের আগে ও পরে সব ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে ৫ মিনিট যাত্রাবিরতি করবে। ইজতেমায় আগত যাত্রীদের কথা বিবেচনায় রেখে টঙ্গী রেলওয়ে জংশনে অতিরিক্ত টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
আরও ৪ মুসল্লির মৃত্যু : ময়দানের জিম্মাদার রফিকুল ইসলাম জানান, ময়দানে আরও চার মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বার্ধক্যজনিত কারণ ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাদের মৃত্যু হয়। এরা হলেন- রংপুরের পীরগঞ্জ থানার উসমানপুর গ্রামের জয়নাল উদ্দিনের ছেলে হুমায়ুন কবির (৬৫), ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালাহাট গোপালপুর গ্রামের আ ফ ম জহুরুল আলম (৬২), ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানার নলভোগ এলাকার ফজলু মিয়ার ছেলে ইলিয়াস মিয়া (৮৫) ও গাইবান্ধার সাঘাটা থানার কামালেরপাড়া গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে মো. আবদুস সোবহান (৮০)। এ নিয়ে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে সাত মুসল্লির মৃত্যু হল।